নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ে তৃতীয়বারের মত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করায় মমতা ব্যানার্জীকে অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু যোদ্ধাদের নেটওর্য়াক ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস। এক অভিনন্দন বার্তার সবুজ সাথীর মত উদ্যোগের প্রশংসা করে আন্ত:সীমানার নদী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা প্রদানেও আহবান জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ মে) এক ইমেইল বার্তায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অফিসিয়াল ইমেইলে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়কারী সোহানুর স্বাক্ষরিত এক অভিনন্দন বার্তায় তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর তিস্তার পানির ন্যায্য বণ্টনের বিষয়ে তিনি মনোনিবেশ করবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘‘আপনি ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, আপনার নতুন সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হল রাজ্যের কোভিড -১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা। আমরা আপনার অবস্থানকে স্বাগত জানাই এবং সবুজ সাথীর মতো পরিবেশ সুরক্ষার উদ্যোগ চলমান রাখায় আপনার দুর্দান্ত নেতৃত্বের প্রশংসা করি। একটি জলবায়ু অভিঘাতে চরম ক্ষতিগ্রস্থ রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দিতে হস্তক্ষেপ দেয়া প্রয়োজন। এ সংক্রান্ত জ্ঞান বিনিময়ের পাশাপাশি জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশ।’’ নিকট প্রতিবেশী হিসাবে ভারতের সঙ্গে এবং বিশেষভাবে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনভাইরাস অতিমারী এবং জলবায়ু সংকটজনিত কুপ্রভাব থেকে শিক্ষা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ু সুবিচার এবং সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য আরও কার্যকরভাবে কাজ করা দরকার। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি আমাদের জলবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানীর প্রসার ঘটাতে হবে এবং সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনকে রক্ষা করতে হবে। আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো আরও ভালভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে। উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সাহসী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। ‘‘আমরা আশা করি আপনি পানি বন্টন বিষয়ে যে অবস্থান নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আপনার সেই অবস্থানের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করবেন। আমাদের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমরা কখনই একে অপরের সাথে প্রতিকূল বা বৈরী সম্পর্কের স্বপ্ন দেখতে পারি না এবং যৌথ জলবায়ুু কর্ম উদ্যোগ ও জলের সহযোগিতা ছাড়া বাঁচতে পারব না! আন্তঃসীমান্ত তিস্তা নদীর জলের বন্টন হ’ল আমাদের প্রাণের দাবি এবং আপনাকে এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি কারণ লবণাক্ততা আমাদের হত্যা করতে চলেছে’’, চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, কোভিড -১৯ এর চেয়েও বড় বিপর্যয় ঘুর্ণিঝড় আম্ফান যা গত বছরের মে মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী স্থলে আছড়ে পড়েছিল। এতে মহানগরী কলকাতা আম্ফান দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলা – দক্ষিণ এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর খুব খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এতে ভারত এবং বাংলাদেশ জুড়ে কমপক্ষে ৮৮ জন নিহত হয়েছিল। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঝড়ের দাপটে প্রায় ১৪০ কোটি ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ভারতের। সদ্য প্রকাশিত ‘স্টেট অফ দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট ২০২০’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে কোভিড -১৯ এর সঙ্গে সঙ্গে চরমতম আবহাওয়ার দাপট পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের কয়েক লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছিল। চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘‘সমস্ত প্রতিকূলতা এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে আপনি পশ্চিমবঙ্গে যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন। সেই ‘খেলা’ শেষ হলেও এখন জলবায়ু সুবিচার অর্জনের জন্য গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করার সময় এসেছে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ না হলে আমরা হেরে যাব। আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উভয়ই জলবায়ু বিপর্যয় ও জলের সংকটে ভুগছি। তবে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা উপকৃত হতে পারি।’’ তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যত রক্ষার জন্য মমতার ক্যারিশম্যাটিক জলবায়ুু নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
Leave a Reply